Logo
HEL [tta_listen_btn]

বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজা

বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো দুর্গাপূজা

নিজস্ব সংবাদদাতা
মহামারী করোনা ভাইরাসের বিভীষিকা কাটিয়ে ওঠে ২ বছর পর জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে দেবীর আরাধনা, সিঁদুর খেলা, নাচ গান, আরতি প্রতিযোগিতা আর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো ৫ দিনব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। বুধবার (৫ অক্টোবর) শহরের বিআইডবিøউটিএ’র ৩নং ঘাটে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সার্বিক তত্ত¡াবধানে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার আয়োজন করা হয়। এই ঘাটে শহরের বেশিরভাগ মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। সেখানে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে প্রতিমা বিসর্জন। বিজয়া দশমীতে অর্থাৎ শেষ দিনের আনুষ্ঠানিকতার শুরু থেকেই শহরের মন্ডপে মন্ডপে ভক্তদের ভিড় ছিলো। দিনব্যাপী চলে নানা পূজা-অর্চণা। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় দশমীবিহিত পূজা ও দর্পণ বিসর্জন। শহরের রামকৃষ্ণ মিশন, আমলাপাড়া পূজা মন্ডপ, উকিলপাড়া হোসিয়ারী পূজা মন্ডপ, সাহা পাড়া পূজা মন্ডপ,নতুন নয়া মাটি পূজা মন্ডপসহ বেশে কিছু মন্ডপে চলে ভক্তদের আরতি আর রঙের হোলি খেলা। পরম ভক্তি নিয়ে নিজ নিজ মনের বাসনা জানিয়ে নারীরা দেবী দুর্গার সিঁথিতে সিঁদুর পরান এবং মিষ্টি মুখ করান। পরে মন্দিরে আগত নারীরা একে অপরের সিঁথিতে সিঁদুর বিনিময় করেন। এরপর বিসর্জনের জন্য সধবা নারীরা দেবীকে সাজান ফুল, সিঁদুর ও নানা অলংকার দিয়ে। এরপর শহরের বিভিন্ন পূজা মন্ডপ থেকে ট্রাক ও ভ্যান গাড়ি করে শহরে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা শুরু হয়। এ শোভাযাত্রাগুলোয় যোগ দেন মন্দিরগুলোর পূণ্যার্থীরা। সেখানে ভক্তদের নাচ গানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। তারা রং ছিটিয়ে ও ঢাকঢোলসহ অন্য বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি উলুধ্বনিতে উৎসবমুখর করে তোলেন পরিবেশ। শোভাযাত্রাগুলো শহরের বিআইডবিøউটিএ’র ৩নং ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়। এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটসমূহে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিসর্জনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি পূজা কমিটির নিজস্ব ভলান্টিয়াররাও দায়িত্ব পালন করেছেন। নিরাপত্তার কাজে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি, সাদা পোশাকধারী পুলিশ, নৌ-পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস, বিআইডবিøউটিএ’র ডুবুরি টিম, সিভিল সার্জনের মেডিকেল টিম সদস্যরাও নিয়োজিত ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে ৫ দিনব্যাপী এই দুর্গোৎসব দেবীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে। যা বুঝিয়ে দিয়েছে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এবারে পূজোয় আনন্দের কোন কমতি ছিলো না। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরে এবার ২১৮টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। এতেই বোঝা যায় নারায়ণগঞ্জ একটি সা¤প্রদায়ীক স¤প্রীতির জেলা। সকল উৎসব আমরা একসাথে উদযাপন করে থাকি। শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হওয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। শিখন সরকার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ একেএম সেলিম ওসমানসহ সকল জনপ্রতিনিধির প্রতি সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তাদের এই অবদান অব্যাহত রাখার দাবি করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনের সঞ্চালনায় শারদীয় দূর্গোৎসবের বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রহিমা খাতুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌস, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহŸায়ক প্রদীপ কুমার দাস, সদস্য সচিব রঞ্জিত মন্ডল, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ কুমার দাস, সাধারণ সম্পাদক উত্তম সাহা, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সাংবাদিক উত্তম সাহা, সাবেক কোষাধ্যক্ষ সুশীল দাস, সাবেক দপ্তর সম্পাদক হিমাদ্রি সাহা হিমু, বন্দর থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, আড়াইহাজার পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সুজন বিশ্বাস, পূজা পরিষদ নেতা কৃষ্ণ আচার্য, তপন ঘোষ, তপন গোপ সাধু, সঞ্জয় কুমার দাসসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার হাতিতে চড়ে মর্ত্যলোকে এসেছিলেন এবং স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে। এবার নারায়ণগঞ্জে ২১৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী মÐপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরেই ৪২টি মন্ডপে পূজা হলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com